ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা চতুর্থ টি-টোয়েন্টি। রোহিত, বিরাট, রাহুল বিহীন অবিশ্বাস্য জয়।
রাজকোটঃ
India vs South Africa 4th T20 results, সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের স্টেডিয়ামটি ঝকঝকে ক্রিকেট প্রেমীদের নিয়ে ভরা ছিলো। এ দিন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা টস জিতে প্রতিপক্ষ ভারতীয় দলকে ব্যাটিং করতে পাঠিয়ে দেন। শুরু থেকে শেষ অবধি ক্রিকেট প্রেমীদের দৃশ্য দেখেই বোঝা যায় যে নিজস্ব জাতীয় দল অর্থাৎ ভারতীয় টিমকে কি পরিমাণ জয়ীর আকাঙ্ক্ষিত। আর ভারতীয় দলের তরুণ অধিনায়ক ঋষভ পন্ত তা করেও দেখান।
সাউথ আফ্রিকার একাদশঃ India vs South Africa 4th T20,টেম্বা বাভুমা (অধিনায়ক) কুইন্টন ডি কক (উইকেট-রক্ষক), রাসি ভ্যান ডার ডুসেন, হেনরিক ক্লাসেন, ডোয়েইন প্রিটোরিয়াস, ডেভিড মিলার, কেশব মহারাজ, এনরিক নর্কিয়া, তাবরাইজ শামসি, মার্কো জ্যানসন, লুঙ্গি এনগিডি।
ভারতের একাদশঃ India vs South Africa 4th T20, ঋষভ পন্থ (অধিনায়ক ও উইকেট-রক্ষক), রতুরাজ গায়কোয়াড়, ইশান কিষন, শ্রেয়স আইয়ার, দীনেশ কার্তিক, হার্দিক পান্ডিয়া, যুজবেন্দ্র চাহাল, অক্ষর প্যাটেল, ভুবনেশ্বর কুমার, হর্ষল প্যাটেল, আবেশ খান।
India vs South Africa 4th T20 results এ দিন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজে সমতা (২-২) ফিরিয়ে আনল ভারতের তরুণ প্রজন্মের অধিনায়ক ঋষভ পন্থের নেতৃত্বে। শুরুতে যেন মনে হয়েছিলো প্রোটিয়া ব্রিগেডের কাছে পন্থ ব্রিগেডের দাঁড়ানো সম্ভব নয়। কিন্তু প্রোটিয়া ব্রিগেডে ভুলে গেছে তাদের পিছনে একজন বিগ পাওয়ার হিটার রয়েছে বলে! ওপেনার রতুরাজ গায়কোয়াড় (৫) লুঙ্গি এনগিডি এর বলে কুইন্টন ডি কক দ্বারা সুইট কট বিহাইন্ড হয়ে যান। সত্যি এই কট বিহাইন্ড অপূর্ব ছিলো।
যখনই একটি ওপেনারের পওন শুরু হয় তখন থেকেই ভারতীয় একাদশে হুলুস্থূল ছড়িয়ে যায়। শ্রেয়স আইয়ারকে (৪) খুব দ্রুত প্যাভিলিয়নে ফিরেতে হয় মার্কো জ্যানসন এলবিডাব্লিউ দ্বারা। পাওয়ার প্লে ওভারে খুবই দ্রুত দুটি উইকেটের পতন ঘটে। তখন তরুণ অধিনায়ক ঋষভ পন্থ ও ওপেনার ইশান কিষন, কোন রকম ম্যাচটিকে সামলাতে থাকে।
কিন্তু কিষনের (২৭) একটি ভুল শর্ট বশত এনরিক নর্কিয়া বলে কুইন্টন ডি কক দ্বারা কট বিহাইন্ড হয়ে যান। পরে ঋষভ পন্থ ও হার্দিক পাণ্ডিয়া ম্যাচটিকে চালাতে থাকে। ঠিক তখন আবার ঋষভ পন্থ (১৭) নিজের খারাপ শর্টে উইকেট দিয়ে বসেন মহারাজের হাতে। পরে ভারতের সেই পাওয়া হিটার অর্থাৎ দীনেশ কার্তিক আসেন। তিনি যেন সম্পূর্ণ ম্যাচে ছেয়ে যান।
এক সময় লেগেছিলো যেন প্রোটিয়া ব্রিগেডের সামনে ভারতের তরুণ শিবির হাঁটু পেতেই দিয়েছে। তখন দীনেশ কার্তিক আর হার্দিক পাণ্ডিয়া তাবড়-তড় ব্যাটিং এর ফলে ম্যাচের ভিন্ন রুপ চলে আসে। এই ইনিংসে দীনেশ কার্তিক মাএ ২৭ বলে ৫৫ রান করেন আর হার্দিক পাণ্ডিয়া ৩১ বলে ৪৬ রান করেন। ভারতের এই দুই বিস্ফোটক ফিনিশার ফলে ভারতের ২০ ওভারে ১৬৯/৬ রান দাঁড়ায়।
ভারতের রানঃ ১৬৯/ ৬ (২০.০)
India vs South Africa 4th T20 results, রতুরাজ গায়কোয়াড় ৫/ ৭ রান, ৭১.৪৩ স্ট্রাইক রেট। ইশান কিষন ২৭/ ২৬ রান, ১০৩.৪৫ স্ট্রাইক রেট। শ্রেয়স আইয়ার ৪/ ২ রান, ২০০ স্ট্রাইক রেট। ঋষভ পন্থ ১৭/ ২৩ রান, ৭৩.৯১ স্ট্রাইক রেট। হার্দিক পাণ্ডিয়া ৪৬/ ৩১ রান, ১৪৮.৩৯ স্ট্রাইক রেট। দীনেশ কার্তিক ৫৫/ ২৭ রান, ২০৩.৭ স্ট্রাইক রেট। অক্ষর প্যাটেল ৮/ ৪ রান, ২০০ স্ট্রাইক রেট (নট আউট)। হর্ষল প্যাটেল ১/ ১ রান, ১০০ স্ট্রাইক রেট (নট আউট)।
সাউথ আফ্রিকা বোলিংঃ
India vs South Africa 4th T20, মার্কো জ্যানসন ৪/ ৩৮ রান, ১টি উইকেট। লুঙ্গি এনগিডি ৩/ ২০ রান, ২টি উইকেট। ডোয়েইন প্রিটোরিয়াস ৪/ ৪১ রান, ১টি উইকেট। এনরিক নর্কিয়া ৩/ ২১ রান, ১টি উইকেট। তাবরাইজ শামসি ২/ ১৮ রান, ০ (শূন্য) উইকেট। কেশব মহারাজ ৪/ ২৯ রান, ১টি উইকেট।
প্রোটিয়া বিগ্ৰেড রান তাড়াঃ
India vs South Africa 4th T20 results, দ্বিতীয় ইনিংসে প্রোটিয়া বিগ্ৰেড রান তাড়া করতে নামেন। কিন্তু ওই আগের ম্যাচের মত এই ম্যাচে ও প্রোটিয়াদের হারের মুখ দেখতে হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে রান তাড়া করতে আসেন ওই দুর্দান্ত ওপেনার জুড়ি অর্থাৎ কুইন্টন ডি’কক ও টেম্বা বাভুমা। বেশ ঠিক-ঠাই ব্যাটিং চলছিলো।
৩.১ ওভারের আবেশ খান এর বলে চোট পেয়ে প্রোটিয়া অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা (১০) মাঠ ছাড়লেন এবং তাঁর জায়গায় ব্যাট করতে নামেন প্রথম সিরিজের বিস্ফোটক অলরাউন্ডার ডোয়েইন প্রিটোরিয়াস। অধিনায়ক রিটায়ার্ড হওয়ার পর কুইন্টন ডি কক আর ডোয়েইন প্রিটোরিয়াস ম্যাচ চালাতে থাকে।
ম্যাচ চালাতে গিয়ে ডি’কক (১৪) ফালতু একটি রান আউট হয়ে যান হর্ষল প্যাটেল হাতে। ডি’কক আউট হওয়ার পর যেন মনে হয় প্রোটিয়াদের শিবিরের কাল-ই চলে আসে। কিন্তু হঠাৎ ডি’কক আউট হওয়ার পর একের পর এক সাউথ আফ্রিকা দল প্যাভিলিয়নে দিকে চলতে থাকে।
ডি’কক আউট হওয়ার পর ডোয়েইন প্রিটোরিয়াস (০) আবেশ খান এর বলে ঋষভ পন্থ দ্বারা ক্লিন কট বিহাইন্ড হয়ে বসেন। রাসি ভ্যান ডার ডুসেন (২০) তিনিও আবেশ খানের বলে রতুরাজ গায়কোয়াড় উইকেট দিয়ে বসেন। পরে হেনরিক ক্লাসেন (৮) তিনি যুজবেন্দ্র চাহালের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে যান।
ক্লাসেন আউট হওয়ার পর শুধুমাত্র প্রোটিয়া বিগ্ৰেড একজন প্লেয়ার উপরে নজর ছিলো যে নিজের বিস্ফোটক ব্যাটিং ম্যাচের দিক নির্ণয় করে দিতে পারত। তিনি আর কেউ নন! তিনি প্রথম সিরিজ ম্যাচের ম্যান অব দ্যা ম্যাচের হিরো ডেভিড মিলার। কিন্তু তিনি হর্ষল প্যাটেল বলে ক্লিন বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে চলে যান।
এইভাবে প্রোটিয়া বিগ্ৰেড একের পর এক মার্কো জ্যানসন কট গায়কোয়াড, বোলিং আবেশ। কেশব মহারাজ কট আইয়ার, বোলিং আবেশ। এনরিক নর্কিয়া কট কিষন, বোলিং চাহাল। লুঙ্গি এনগিডি কট গায়কোয়াড়, বোলিং অক্ষর।
সাউথ আফ্রিকা রানঃ ৮৭/ ১০ (১৬.৫)
কুইন্টন ডি কক ১৪/ ১৩ রান, ১০৭.৬৯ স্ট্রাইক রেট। টেম্বা বাভুমা ৮/ ১১ রান, ৭২.৭৩ স্ট্রাইক রেট। ডোয়েইন প্রিটোরিয়াস ০/ ৬ রান, ০ (শূন্য) স্ট্রাইক রেট। রাসি ভ্যান ডার ডুসেন ২০/ ২০ রান, ১০০ স্ট্রাইক রেট। হেনরিক ক্লাসেন ৮/ ৮ রান, ১০০ স্ট্রাইক রেট। ডেভিড মিলার ৯/ ৭ রান, ১২৮.৫৭ স্ট্রাইক রেট। মার্কো জ্যানসন ১২/ ১৭ রান, ৭০.৫৯ স্ট্রাইক রেট। কেশব মহারাজ ০/ ২ রান, ০ (শূন্য) স্ট্রাইক রেট। এনরিক নর্কিয়া ১/ ৪ রান, ২৫ স্ট্রাইক রেট। লুঙ্গি এনগিডি ৪/ ১০ রান, ৪০ স্ট্রাইক রেট। তাবরাইজ শামসি ৪/ ৩ রান, ১৩৩.৩৩ স্ট্রাইক রেট।
ভারত বোলিংঃ
ভুবনেশ্বর কুমার ২/ ৮ রান, ০ (শূন্য) উইকেট। হার্দিক পান্ডিয়া ১/ ১২ রান, ০ (শূন্য) উইকেট। আবেশ খান ৪/ ১৮ রান, ৪টি উইকেট। হর্ষল প্যাটেল ২/ ৩ রান, ১টি উইকেট। যুজবেন্দ্র চাহাল ৪/ ২১ রান, ২টি উইকেট। অক্ষর প্যাটেল ৩.৫/ ১৯ রান, ১টি উইকেট।
এক নজরে কিছু রেকর্ডঃ
দীনেশ কার্তিক; ইন্টার্নেশনাল টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার দ্রুত গতি ফাস্ট হাফ সেঞ্চুরি ৫৫/ ২৭। এবং ক্যারিয়ার এটি প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। তিনি ১৬ বছর পূর্বে এই টিমের পক্ষে প্রথম প্লেয়ার অফ দ্যা ম্যাচ খেতাব বিজয়ী হয়েছিলেন আর এই ম্যাচে ও তিনি প্লেয়ার অফ দ্যা ম্যাচ খেতাব বিজয়ী।
আবেশ খান; ইন্টার্নেশনাল টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার বেস্ট উইকেট ৪/ ১৮
টি-টোয়েন্টিতে India vs Sa রানের সবচেয়ে বড় জয়ঃ
৮২ রান Rajkot ২০২২
৪৮ রান Vizag ২০২২
৩৭ রান Durban ২০০৭